কিন্তু সবচেয়ে আফসোসের বিষয় হলো, নারী আজ আপন ঘরে পরম আপনজন কর্তৃক নিপীড়িত হচ্ছে।এক জরিপে দেখা গেছে, বিবাহিত নারীদের প্রতি চারজনের একজন স্বামীর নির্যাতনের শিকার। নারী যখন উপেক্ষিত হয় এমন কারো কাছে, যাকে নিয়ে সে তার স্বপ্নের সৌধ নির্মাণ করে
তখন সে পরকীয়ার মতো ভয়াবহ অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ে। তবে ভয়ঙ্কর ব্যাপার হলো,কোনো কোনো দেশ তো নারীর পরকীয়া সম্পর্ককে আর অপরাধ গণ্য করছে না।
ভারতের সুপ্রিম কোর্টের রায়ে পরকীয়া আর অপরাধ থাকল না- এমন একটি রায়ের প্রতিক্রিয়ায় অনেক নারী বলেছে, ওই রায়ে নাকি নারীর অধিকার পূর্ণতা পেয়েছে।
তবে বাস্তবতা হলো, কোনো নারী যখন তার স্বামীর কাছেই অবজ্ঞার শিকার হয়, তার ন্যায্য অধিকারগুলো থেকে বঞ্চিত হয় তখন সে জেদি হয়, মারমুখী বা আক্রমণাত্মক হয়।
নারী স্বামীকে চায়ের সাথে ঘুমের ট্যাবলেট প্রয়োগ করে হত্যা করে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা খুব একটা কম নয়।
নারী নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র এখনো আমরা পত্রিকায় দেখি। কোমলমতি শিশু থেকে অশীতিপর বৃদ্ধ পর্যন্ত কেউই রেহাই পাচ্ছেন না নির্যাতনের হাত থেকে। নারীর প্রতি সহিংসতা ক্রমেই ভয়ানক রূপ ধারণ করছে।চার থেকে পাঁচ বছরের যে শিশু, সেও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে পাষণ্ড লম্পট দ্বারা। অবস্থা এমন হয়েছে, নারী মানেই নির্যাতন, নারী মানেই বৈষম্য।
নারী নির্যাতন সমাজের মারণব্যাধির রূপ ধারণ করেছে। বিশেষত নারীকে পণ্য করে বাজারে তোলার যে সংস্কৃতি চালু হয়েছে, তাও নারী নির্যাতন, এসিড নিক্ষেপ, নারী ধর্ষণ, নারীর শ্লীতাহানির অন্যতম কারণ।
পণ্যের বিজ্ঞাপনে নারীকে আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে ব্যবহার, ইন্টারনেট ও গণমাধ্যমে নারীকে শারীরিকভাবে আবেদনময়ী করে উপস্থাপন নারীর যৌন হয়রানিকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
আমাদের মনে রাখা উচিত, একজন নারী তার স্বামীর কাছে শুধু ভাত-কাপড়ের জন্যই আসে না। তাহলে তো ধনাঢ্য পরিবারের মেয়েদের বিয়েরই প্রয়োজন হতো না বরং স্ত্রীর অর্থনৈতিক (ভরণ-পোষণের) অধিকারের পাশাপাশি তার আরো কিছু অধিকার রয়েছে, যেগুলো অপূর্ণ থেকে গেলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হতে পারে। বৈবাহিক ব্যবস্থার স্থায়িত্ব হুমকির মুখে পড়তে পারে। স্ত্রীর মানসিক বিনোদন তার অন্যতম।
একজন স্ত্রী তার স্বামীর কাছ থেকে শুধু ভরণ-পোষণে তুষ্ট থাকতে পারে না। বরং স্বামীর কাছে তার আরো কিছু চাওয়া-পাওয়ার আছে। সেগুলো সে পূর্ণভাবে পেতে চায়।কোনো স্ত্রী যদি সত্যিকার অর্থে স্বামীভক্ত হয়, তাহলে সে তার স্বামীকে মনে-প্রাণে ভালোবাসে, স্বামীকে নিয়ে সে তার স্বপ্নের সৌধ নির্মাণ করে। সে ক্ষেত্রে স্ত্রীও চায় স্বামী তাকে ভালোবাসুক,তার প্রতি আলাদাভাবে খেয়াল করুক, তাকে গুরুত্ব দিক, তার সাথে হাসিমুখে কথা বলুক এবং আবেগপূর্ণ আচরণ করুক।
স্বামীভক্ত কোনো স্ত্রী যদি তার স্বামীর কাছ থেকে এসব অধিকার না পায় অথবা কোনো কারণে সে তা থেকে বঞ্চিত হয়, তখন সে মারাত্মক অপমান বোধ করে এবং মানসিকভাবে আহত হয়।স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসাপূর্ণ সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার কিংবা হালকা হওয়ার এটাও একটি কারণ।
অনেক স্বামী আছেন, স্ত্রীর এসব বিষয়ের প্রতি খেয়াল করেন না; বরং তারা ভরণ-পোষণটাকেই বড় কিছু মনে করেন। তাদের ধারণা, স্ত্রীর খরচ বহন করা,তার ভাত-কাপড়ের ব্যবস্থা করা, তাকে বাসস্থান দেয়া হলেই তার প্রতি সবটুকু দায়িত্ব পালন হয়ে যায়। তারা নিজেদের বিনোদনের জন্য বন্ধুবান্ধবদের সাথে বিনোদন ও নিয়মিত সময় কাটান। কিন্তু স্ত্রীর মানসিক প্রত্যাশার ব্যাপারটার প্রতি একদম খেয়াল করেন না।
এটা স্ত্রীর প্রতি একপ্রকার জুলুম। স্ত্রীর প্রতি স্বামীর এই দৃষ্টিভঙ্গি ইসলাম সমর্থন করে না। বরং এই মনোভাবের কঠোর নিন্দা করেছে ইসলাম। নিশ্চিত করেছে স্ত্রীর নিরাপদ ও সম্মানজনক জীবন।
স্ত্রী হিসেবে ইসলাম নারী জাতিকে অধিকার ও মর্যাদা দিয়েছে। স্বামীকে নির্দেশ দিয়েছে স্ত্রীর সাথে ভালো আচরণ করার। আল কুরআনে বলা হয়েছে, ‘আর তোমরা স্ত্রীদের সাথে বসবাস করো সদাচারের সাথে।আর যদি তোমরা কোনো কারণে তাদের অপছন্দ করো, তাহলে হয়তো তোমরা এমন একটি বস্তুকে অপছন্দ করলে, যাতে আল্লাহ তায়ালা প্রভুত কল্যাণ রেখেছেন।
(সূরা নিসা : ১৯) এক হাদিসে আল্লাহর রাসূল সা: ইরশাদ করেন, ‘কোনো মুমিন পুরুষ যেন কোনো মুমিন নারীকে অপছন্দ না করে।’
(সহিহ মুসলিম : হাদিস-১৪৬৯, সুনানে ইবনে মাজা : হাদিস-১৯৭৯) এই হাদিসে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাম্পত্য জীবনের কলহ নিরসন ও নারীর প্রতি সহিংসতা দূরীকরণের একটি মূলনীতি বলে দিয়েছেন।স্ত্রীর সব আচরণ স্বামীর কাছে ভালো লাগবে, এটা অসম্ভব। আবার স্বামীর সব আচরণ স্ত্রীর কাছে ভালো না লাগাই স্বাভাবিক।
কারণ আল্লাহ তায়ালা কাউকেই পূর্ণতা দান করে সৃষ্টি করেননি। প্রত্যেকের ভেতরেই কিছু না কিছু মন্দ স্বভাব থাকবেই। ভালো ও মন্দ মিলেই মানুষ।কাজেই স্ত্রীর কোনো স্বভাব স্বামীর কাছে অপছন্দ হলে সে যেন ধৈর্যধারণ করে এবং ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে। স্ত্রীর ভালো গুণগুলোর